Published on: Feb. 26, 2025, 5:46 p.m.
Category: পরিচিতি
আন-নূর কর্জে হাসানা একটি সমবায়ভিত্তিক আর্থিক মডেল, যা সুদমুক্ত লেনদেনের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে। এই মডেলের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের অভাবগ্রস্ত ও আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষদের সহায়তা করা এবং সুদমুক্ত লেনদেনের মাধ্যমে ইসলামিক নীতিমালা অনুসরণ করা। এই মডেলে সদস্যদের কাছ থেকে কোনো সুদ নেওয়া হয় না বা সদস্যদেরকে কোনো সুদ দেওয়া হয় না। এটি সম্পূর্ণভাবে কর্জে হাসানার নীতিতে পরিচালিত হয়।
আন-নূর কর্জে হাসানার কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রথমে একটি ব্রাঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে হয়। একটি মসজিদ বা গ্রামকেন্দ্রিক এলাকায় এই ব্রাঞ্চ তৈরি করা যেতে পারে। শুধুমাত্র ওই মসজিদ বা গ্রামের স্থানীয় ব্যক্তিরাই এই ব্রাঞ্চের সদস্য হতে পারবেন। দূরবর্তী বা অন্য এলাকার কেউ এই ব্রাঞ্চের সদস্য হতে পারবেন না। সদস্য হওয়ার জন্য প্রথমে ৫০ টাকা ভর্তি ফি প্রদান করতে হবে। সদস্যদের প্রতি সপ্তাহে বা মাসে সঞ্চয় জমা দিতে হবে। এই সঞ্চয়ের টাকা পরবর্তীতে তাদের প্রয়োজনে ফেরত দেওয়া হবে। সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা থেকেই মূলত ফান্ড গঠিত হয় এবং এই ফান্ড থেকে সদস্যদের মধ্যে কর্জ বিতরণ করা হয়।
সদস্যদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে কর্জ প্রদান করা হয়। কর্জ দেওয়ার আগে সদস্যের প্রয়োজনীয়তা ও আর্থিক অবস্থা যাচাই করতে হবে। একজন সদস্যকে প্রথম ধাপে সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা কর্জ দেওয়া যেতে পারে। এই টাকা সদস্যকে সপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে ফেরত দিতে হবে। কর্জ দেওয়ার সময় একজন সাক্ষী থাকতে হবে এবং একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। সাক্ষী এমন ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে হবে, যিনি টাকা ফেরত আদায়ে সহায়তা করতে পারবেন। যদি কোনো সদস্য আর্থিক সংকটে পড়ে এবং সময়মতো টাকা ফেরত দিতে না পারে, তাহলে তার জন্য সময় বাড়ানো যেতে পারে বা কিস্তি সহজ করা যেতে পারে। তবে এটি শুধুমাত্র বিশেষ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। সাধারণত সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে কর্জ পরিশোধ করতে হবে।
সদস্য নির্বাচনের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব ব্যক্তির লেনদেন খারাপ, নেশাগ্রস্ত বা আচরণ অসন্তোষজনক, তাদের সদস্য হিসেবে নেওয়া উচিত নয়। কর্জ প্রদানের আগে সদস্যের পূর্বের লেনদেন, আচরণ ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই করতে হবে। সাধারণত চিকিৎসা, শিক্ষা, নতুন ব্যবসা বা চাকরির জন্য কর্জ দেওয়া যেতে পারে। যদি কোনো সদস্যের এমন অবস্থা হয় যে তাকে কর্জ না দিলে সে সুদখোর বা এনজিওর শরণাপন্ন হতে বাধ্য হবে, তাহলে তাকে কর্জ দেওয়া যেতে পারে।
ফান্ড বৃদ্ধির জন্য দ্বীনদার ও অর্থবিত্তশীল ব্যক্তিদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। তাদেরকে ফান্ডে দান বা সীমিত সময়ের জন্য টাকা জমা রাখার জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে। যেমন, তাদেরকে বলা যেতে পারে যে তারা ২০,০০০ টাকা ফান্ডে জমা রাখলে পরবর্তীতে তা উত্তোলন করতে পারবেন। ব্রাঞ্চের কার্যক্রম সফল হলে আন-নূর কর্জে হাসানার কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করা হতে পারে। প্রতিটি ব্রাঞ্চে চার থেকে পাঁচজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি থাকবেন, যারা সদস্য নির্বাচন, কর্জ প্রদান ও ফেরত আদায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। একজন বিশ্বস্ত ও দ্বীনদার ব্যক্তিকে সপ্তাহে এক থেকে দুই ঘন্টা সময় দিয়ে টাকা সংগ্রহ ও হিসাব রাখার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
হিসাব সংরক্ষণ ও লেনদেন নিয়ন্ত্রণের জন্য আন-নূর কর্জে হাসানার একটি সফটওয়্যার রয়েছে https://korjehasana.com এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে সমস্ত হিসাব-নিকাশ ও লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রয়োজন হলে ব্রাঞ্চের দায়িত্বশীলদের এই সফটওয়্যার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে, যাতে তারা সহজেই হিসাব সংরক্ষণ ও দেখভাল করতে পারেন।
আন-নূর কর্জে হাসানা একটি সুদমুক্ত ও ইসলামিক নীতিভিত্তিক আর্থিক মডেল, যা সমাজের দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই মডেলের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। এটি শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং ইসলামের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করে। এই কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য সদস্যদের সততা, দায়িত্বশীলতা ও সহযোগিতা অপরিহার্য।